বিদেশ ডেস্ক ॥ যুক্তরাষ্ট্র ও নেটো জোট আফগানিস্তান থেকে তাদের সৈন্যদের সরিয়ে নিলে পুরো দেশজুড়ে তালেবানরা দ্রুত সামরিক শক্তি লাভ করতে পারে বলে সতর্ক করেছেন, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন। তালেবান ও পূর্ববর্তী ট্রাম্প প্রশাসনের মধ্যে চুক্তি অনুযায়ী, আফগানিস্তানে যেসব মার্কিন সেনা মোতায়েন আছে, তাদের আগামী মাসের শেষের দিকে দেশটি ত্যাগ করার কথা। তবে আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানির কাছে লেখা একটি চিঠিতে মি. ব্লিংকেন সতর্ক করে বলেছেন যে, এই তালেবান হঠাৎ আক্রমণাত্মক হয়ে উঠতে পারে। মার্কিন সেনারা ২০০১ সালে আফগানিস্তানে আক্রমণ করে তালেবানকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয়। যুক্তরাষ্ট্রে ৯/১১ সন্ত্রাসী হামলার প্রতিক্রিয়ায় ওই সামরিক অভিযান চালানো হয়েছিল। জানুয়ারিতে, বাইডেন প্রশাসন জানায় যে, ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন তালেবানের সাথে যে শান্তি চুক্তি হয়েছিল, তারা সেটা পর্যালোচনা করবে। মে মাসের মধ্যে তাদের সরিয়ে নেয়ার কথা। এই চুক্তির আওতায়, তালেবানের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আফগানিস্তানে থাকা মার্কিন নেতৃত্বাধীন নেটোর বাকি ১০ হাজার সেনাকে পহেলা মে’র মধ্যেই সরিয়ে নেয়ার কথা। হোয়াইট হাউস এখন বলছে যে, এই সৈন্যদের সরিয়ে নেয়ার আগে তারা নিশ্চিত হতে চান যে আফগান জঙ্গিগোষ্ঠী তাদের “প্রতিশ্রুতি অনুসারে কাজ করছে” বিশেষ করে সহিংসতা হ্রাস এবং সন্ত্রাসীদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার প্রতিশ্রুতি তারা রক্ষা করছে। দেশটিতে সহিংসতার মাত্রা এখন অনেক বেশি – সাংবাদিক, অ্যাকটিভিস্ট, রাজনীতিবিদ এবং নারী বিচারকদের লক্ষ্য করে হত্যা করা হচ্ছে। মিস্টার ব্লিংকেনের চিঠিটি রবিবার বিবিসি হাতে পেয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী, আফগানিস্তানে ৯০ দিনের মধ্যে সহিংসতা কমিয়ে আনার পাশাপাশি জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে একটি নতুন আন্তর্জাতিক শান্তি প্রক্রিয়া চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন যেন স্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানো সম্ভব হয়। আফগানিস্তানের নিরাপত্তা পরিস্থিতি যেন আরও অবনতি না হয়, সেজন্য জরুরি ভিত্তিতে এই পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন বলে সতর্ক করেছেন তিনি। জাতিসংঘকে বলা হবে, সংস্থাটি যেন এই অঞ্চলের পররাষ্ট্র মন্ত্রী এবং রাষ্ট্রদূতদের নিয়ে বৈঠকে বসে। ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, তালেবান ও আফগান সরকারের মধ্যে একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক আয়োজনের ক্ষেত্রে তুরস্ক সম্ভাব্য স্থান হতে পারে। বিবিসির প্রধান আন্তর্জাতিক সংবাদদাতা লিস ডুসেট বলেছেন, ওই চিঠিতে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘতম যুদ্ধের শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য ওয়াশিংটনের প্রচেষ্টাকে কথা তুলে ধরা হয়েছে। বিবিসির সংবাদদাতা আরও জানান, সৈন্য সরিয়ে নেয়ার ফলে গৃহযুদ্ধের আশঙ্কা এবং আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের পতন এড়িয়ে যেতে প্রেসিডেন্ট ঘানি এবং তালেবানদের উপর চাপ বাড়িয়ে দিচ্ছেন মি. ব্লিংকেন। আফগান সরকার ও তালেবানের মধ্যে শান্তি আলোচনা স্থগিত থাকায় প্রেসিডেন্ট ঘানি শনিবার জঙ্গি সংগঠনটিকে সহিংসতা ত্যাগ করে নতুন করে আলোচনা বসার আহ্বান জানিয়েছেন। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে স্বাক্ষরিত চুক্তিতে বলা হয়েছে যে, যদি তালেবান তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে তবে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার নেটোর মিত্ররা ১৪ মাসে সমস্ত সেনা প্রত্যাহার করে নেবে। ওই প্রতিশ্রুতির মধ্যে রয়েছে যে, তালেবান তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন অঞ্চলগুলোয় আল-কায়েদা বা অন্যান্য জঙ্গিদের ভিড়তে দেবে না। এবং তারা জাতীয় শান্তি আলোচনার প্রক্রিয়া এগিয়ে নেবে। যদিও কট্টরপন্থী ইসলামী গোষ্ঠী তালেবান, ঐতিহাসিক চুক্তির পর আন্তর্জাতিক সেনাবাহিনীর উপর হামলা চালানো বন্ধ করে দিয়েছে, তবে আফগানদের বিরুদ্ধে তাদের লড়াই অব্যাহত আছে। আফগান সরকারের সাথে আলোচনা শুরু করার শর্ত হিসাবে, তালেবানরা দাবি করেছিল যে তাদের কয়েক হাজার বন্দীদের যেন বন্দি বিনিময়ের আওতায় মুক্তি দেওয়া হয়। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে দোহায় সরাসরি আলোচনা শুরু হয়, তবে এখনও ওই আলোচনায় বড় ধরণের কোন অগ্রগতি হয়নি।
Leave a Reply